জন্মের পর শিশু না কাঁদলে কী করবেন তা জানুন
পোস্ট সূচিপত্রঃ জন্মের পর শিশু না কাঁদলে কী করবেন
জন্মের পর শিশু না কাঁদলে কী করবেন
বেশিরভাগ শিশু জন্মের পর কেঁদে দেয়। কিন্তু এখন প্রশ্ন হল জন্মের পর শিশু না কাঁদলে কী করবেন ? জন্মের পর শিশুর না কাঁদলে মেডিকেল সাইন্স এর ভাষায় একে পেরিনেটাল এসফেকশিয়া বলা হয়। যদি বাচ্চা মায়ের গর্ভে থাকাকালীন সময়ে অক্সিজেন কম পায়, অথবা বাচ্চা প্রসবের যদি জরায়ু মুখে লম্বা সময় ধরে আটকে থাকে, অথবা যদি মায়ের শরীরে অক্সিজেনের ঘাটতি থাকে, বাচ্চার মায়ের যদি রক্তচাপ কম থাকে সেক্ষেত্রে বাচ্চার মস্তিষ্কে অক্সিজেন পৌছায় না এবং মস্তিষ্কও কাজ করে না। যার কারণে এক পর্যায়ে বাচ্চা কান্না করে না।
আরো পড়ুনঃ মোটা হওয়ার খাদ্য তালিকা
বাংলাদেশে হেল্পিং বেবিস ব্রেথ নামে একটি সেমিনার হয় সেখানে রুট লেভেলের স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তারা জানে জন্মের পর শিশু না কাঁদলে কী করতে হবে। আমরা তাদেরকে ট্রেইনড দাই বলে থাকি। বাচ্চাকে শুকনো কাপড় দিয়ে ড্রাই করতে হবে এবং পরিষ্কার কাপড় দিয়ে থাকে মোড়াতে হবে। মুখে কোন কিছু লেগে আছে কিনা সেটা দেখতে হবে। মুখে কোন কিছু লেগে থাকলে তা পরিষ্কার করতে হবে। বেশির ভাগ শিশু এ সময় কেঁদে ফেলে। এর পরে ও যদি না কাঁদে তাহলে নবজাতকে পিছনে তিনটি উদ্দীপনা দিতে হবে।
না কাঁদলে দ্বিতীয়বার তাকে উদ্দীপনা দিতে হবে। তারপরেও না কাঁদলে মাউথ টু মাউথ উদ্দীপনা দেওয়ার চেষ্টা করা। তখন বাচ্চার হার্ট বিট দেখে এবং বাচ্চার রেসপিরেটরি রেট পর্যবেক্ষন করে। যদি বাচ্চা বাসায় জন্মগ্রহন করে আর জন্মের পর শিশু যদি না কাঁদে তাহলে বাচ্চাকে দ্রুত হসপিটালে নিন। জন্মের পর শিশু না কাঁদলে কী করবেন আশা করি আলোচনা থেকে তা জানতে পেরেছেন।
সুস্থ নবজাতকের লক্ষণ
জন্মের পর ২৮ দিন পর্যন্ত শিশুকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় নবজাতক বলা হয়। এখন প্রশ্ন হলো নবজাতক সুস্থ নাকি অসুস্থ। শুধু শরীর স্বাস্থ্য দেখে এটা মূল্যায়ন করা যায় না যে বাচ্চা সুস্থ আছে। আপনাকে জানতে হবে সুস্থ নবজাতকের লক্ষণ গুলো কি কি সেগুলো। আজকের এই প্যারাতে আমরা আলোচনা করবো সুস্থ নবজাতকের লক্ষণ গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত। চলুন তাহলে আর দেরি না করে সুস্থ নবজাতকের লক্ষণ গুলো জেনে নেওয়া যাক।
আরো পড়ুনঃ পেট ব্যাথা কেন হয় - পেটে ব্যথা হলে কী করবেন
- নবজাতক মাতৃগর্ভে ৩৭ থেকে ৪০ সপ্তাহ থাকবে। নবজাতক জন্মের পর পরই কেঁদে উঠবে।
- নবজাতকের ওজন হবে ২৫০০ থেকে ৪০০০ গ্রাম।
- নবজাতকের শরীরের তাপমাত্রা হবে ৯৭ থেকে ৯৯.৫ ডিগ্রী ফারেনহাইট।
- নবজাতক স্বাভাবিক ভাবে শ্বাস- প্রশ্বাস গ্রহণ করবে। প্রতি মিনিটে শ্বাস- প্রশ্বাসের গতি হবে ৩০ থেকে ৪০ বার।
- প্রতি মিনিটে হ্রদস্পন্দন হবে ১০০ থেকে ১৬০ বার।
- স্বাভাবিক ভাবে নবজাতক প্রতিদিন ১৮ থেকে ২০ ঘন্টা ঘুমায়।
- বেশিরভাগ সুস্থ নবজাতক ২৪ ঘন্টার মধ্যে প্রস্রাব এবং ৪৮ ঘন্টার মধ্যে পায়খানা করে।
- জন্মের পর পরই সে মায়ের বুকের শাল দুধ গ্রহণ করে।
আশা করি পুরো প্যারাটি মনোযোগ সহকারে পড়েছেন। আশা করি এতক্ষণে সুস্থ নবজাতকের লক্ষণ গুলো জেনে গেছেন।
নবজাতকের অসুস্থতার লক্ষণ
আমরা সকলেই সুস্থ স্বাভাবিক নবজাতক শিশু কাম্য করি। কিন্তু দেখা যায় অনেক সময় জন্মের পর কিছু শিশু সুস্থ আবার কিছু শিশু অসুস্থ। আমরা বড়রা অসুস্থ হলে মুখ ফুটে বলতে পারি। কিন্তু যখন নবজাতক অসুস্থ হয় তখন তারা মুখ ফুটে বলতে পারে না। আজকের এই প্যারা থেকে আমরা জানবো নবজাতকের অসুস্থতার লক্ষণগুলো। কি কি লক্ষণ থাকলে আমরা বুঝবো যে নবজাতক অসুস্থ সে বিষয়ে বিস্তারিত। চলুন তাহলে আর দেরি না করে নবজাতকের অসুস্থতার লক্ষণ গুলো জেনে নেওয়া যাক।
আরো পড়ুনঃ রূপচর্চায় এলোভেরা ব্যবহারের ১০টি সহজ উপায়
- নবজাতক খাবার খেতে না পারা। আগে যেভাবে সে দুধ খেতো সে এখন সেভাবে দুধ খেতে পারছে না। এ বিষয়টি নবজাতকের মা উপলব্ধি করতে পারবে।
- নবজাতকের শরীর ( মাথা থেকে পা পর্যন্ত ) যদি হলুদ হয়ে যায় তাহলে দেরি না করে ডাক্তারের শরনাপন্ন হতে হবে।
- নবজাতকের নাভি থেকে পুঁজ পড়া অথবা নাভি লাল হয়ে যাওয়া ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দিলে
- শিশুর জ্বর আসা, শিশু নিস্তেজ হয়ে যাওয়া, শিশুর শরীর যদি গরম কিংবা ঠান্ডা হয়ে যায় এই দুইটি লক্ষণ শিশুর জন্য বিপদজনক।
- নবজাতকের যদি খিচুঁনি লক্ষণ দেখা যায় অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
- নবজাতকের শরীরে পুঁজ জমে যাওয়া। এক্ষেত্রে ২ ধরণের পুঁজ দেখা যাবে। একটি হলো সাদা পুঁজ অন্যটি হলো লাল লাল দানা। লাল লাল দানা যেটি সেটি অটোমেটিক ঠিক হয়ে যাবে। সাদা পুঁজ দেখা দিলে দেরি না করে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
- নবজাতক মায়ের বুকের শাল দুধ টেনে খেতে পারছে কিনা সেদিকে নজর রাখতে হবে। অনেক সময় দেখা যায় শিশুর গলায় খাবার আটকে যায় এতে শিশুর শ্বাসকষ্ট হতে পারে। এজন্য বসে নবজাতককে দুধ খাওয়াবেন। কখনোও শুয়ে নবজাতককে খাবার খাওয়াবেন না । এতে শিশুর গলায় খাবার আটকে গিয়ে শ্বাসকষ্ট সমস্যা হতে পারে।
- নবজাতক যদি ৪৮ ঘন্টার মধ্যে প্রস্রাব বা পায়খানা না করে তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
- নবজাতকের ওজন যদি ২৫০০ গ্রাম এর কম হয় ও নবজাতক যদি ৩৭ সপ্তাহ পূর্ণ হওয়ার আগে জন্মগ্রহণ করে ও শিশু যদি জন্মের পর না কাঁদে ও নবজাতকের যদি শ্বাসকষ্ট হয় এসব লক্ষণ দেখে বুঝা যায় শিশুটি অসুস্থ। আশা করি এতক্ষণে আলোচনা থেকে নবজাতকের অসুস্থতার লক্ষণ গুলো জেনে গেছেন।
শিশু মৃত্যুর সবচেয়ে বড় কারণ
শিশু মৃত্যু এইটা নতুন কিছু নয়। প্রায় দেখা যায় কোন না কোন কারণে হাসপাতালে কিংবা ঘরে জন্ম নেওয়া শিশু মৃত্যু বরণ করছে। আজকের আলোচনা থেকে আমরা জানবো শিশু মৃত্যুর সবচেয়ে বড় কারণ গুলো কি কি সে বিষয়ে বিস্তারিত। শিশু মৃত্যুর সবচেয়ে বড় কারণ গুলোর মধ্যে রয়েছে শ্বাসকষ্ট, নবজাতকের ওজন কম, অকাল জন্ম, নিউমোনিয়া ইত্যাদি কারণ গুলো। শিশু মৃত্যুর সবচেয়ে বড় কারণ গুলো চলুন বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
শ্বাসকষ্টঃ নবজাতকের মায়ের শরীরে যদি অক্সিজেনের ঘাটতি থাকে তাহলে নবজাতকের শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গে অক্সিজেন পৌঁছায় না। ফলে শিশু শ্বাসকষ্টজনিত বিভিন্ন সমস্যায় ভোগে। আর অক্সিজেন ছাড়া শরীরের কোষ গুলো ঠিকঠাক কাজ করতে পারে না। যার ফলে শরীরে বর্জ্য পদার্থ জমে থাকে। এই বর্জ্য পদার্থ জমে থাকার কারণে শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ক্ষতি হয়। শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত শিশুদের সময় মত চিকিৎসা দেওয়া হলে ধীরে ধীরে শিশু সুস্থ হয়ে ওঠে। শ্বাসকষ্টের কারণে বা শরীরে অক্সিজেনের স্বল্পতার কারণে শিশুর ফুসফুস, কিডনি, মস্তিষ্ক, লিভার, হৃদপিণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
চিকিৎসার মাধ্যমে শিশু স্বাভাবিক হয়ে গেলেও কিছু ক্ষেত্রে শিশুর দৃষ্টিশক্তি বিঘ্নিত হয়, শিশুর খিচুনি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি, শ্বাসকষ্ট জনিত রোগে আক্রান্ত শিশুর রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়। তাই বলা যায় শ্বাসকষ্ট নবজাতক শিশুর জন্য বিপদজনক। শ্বাসকষ্টের কারণে নবজাতক শিশুর মৃত্যুর সম্ভাবনা বেশি। যদি বাসায় শিশু জন্মগ্রহণ করে আর শিশুর মাঝে যদি শ্বাসকষ্ট দেখা যায় তাহলে বিলম্ব না করে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া দরকার।
কম ওজনের শিশুঃ দেশের বেশিরভাগ শিশু জন্মের সময় তাদের ওজন কম থাকে। জন্মের সময় শিশুর ওজন যদি ২৫০০ থেকে ৪০০০ গ্রাম হয় তাহলে ধরে নেওয়া হয় শিশুটি সুস্থ। কিন্তু দেখা যায় বেশিরভাগ শিশু ২৫০০ গ্রাম এর কম ওজনের হয়ে থাকে। যে সকল শিশুর ওজন কম তাদের শরীরের তাপমাত্রা কম থাকে এবং তারা শারীরিকভাবে দুর্বল থাকে। যার কারণে তাদের মায়ের বুকের দুধ টেনে খাওয়ার শক্তি থাকে না। এমন নবজাতকের মৃত্যু সম্ভাবনা বেশি।
অকালে শিশুর জন্মঃ যে সকল শিশু ৩৭ থেকে ৪০ সপ্তাহ মায়ের গর্ভে থাকার পর ভূমিষ্ঠ করা হয় সে সকল শিশু সুস্থ হয় এবং পরিপক্ক হয়। অনেক সময় দেখা যায় নবজাতকের মায়ের শারীরিক বিভিন্ন জটিলতার কারণে ৩৭ সপ্তাহ পূর্ণ হওয়ার আগে শিশু ভূমিষ্ঠ করা হয়। এ সকল শিশুকে আমরা বলি প্রিম্যাচিউর বেবি। বিশেষজ্ঞদের মতে, নিউমোনিয়ার পর নবজাতক মৃত্যুর সবচেয়ে বড় কারণ হলো অপরিপক্ক শিশুর জন্ম। গবেষণায় দেখা গেছে, অকালে শিশুর জন্মের কারণে প্রায় ৪৫ শতাংশ নবজাতক মারা যায়। মায়ের গর্ভকালীন জটিলতার কারণে প্রিম্যাচিউর শিশুর জন্ম হয়। এজন্য মায়ের গর্ভকালীন সময়ে অবহেলা, সময় মত ডাক্তার না দেখানো এগুলো দায়ী।
সেপসিসে শিশুর মৃত্যুঃ সেপসিস এটা এমন একটা রোগ যা শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে দুর্বল করে দেয়। সেপসিসে নবজাতক শিশু, অকালে জন্ম নেওয়া শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। প্রশ্ন হলো সেপসিস এই রোগটি কিভাবে হয় ? বিভিন্ন কারণে সেপসিস এই রোগটি হতে পারে। সেগুলো হলোঃ সময়মতো শিশুদের জন্য টিকা না নিলে, যদি ব্যাকটোরিয়া এবং ভাইরাসের কারণে ডায়রিয়া বা ফুসফুসজনিত রোগ হয় তাহলে এর কারণে সেপসিস হতে পারে। শিশুর অকাল জন্ম কিংবা নবজাতক প্রসবের সময় মায়ের শরীরে জ্বর থাকলে সেপসিস হতে পারে।
উপসংহার
প্রিয় পাঠক আশা করি পুরো পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়েছেন। পোস্টটি থেকে আশা করি জন্মের পর শিশু না কাঁদলে কী করবেন, সুস্থ নবজাতকের লক্ষণ, নবজাতকের অসুস্থতার লক্ষণ, শিশু মৃত্যুর সবচেয়ে বড় কারণ ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। পোস্টটি ভালো লেগে থাকলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন। এতক্ষণ সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ। আপনার সুস্থতা কামনা করে এখানে শেষ করছি। আমাদের সাথেই থাকুন। ২৪৭২৯
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url