পটল চাষ কিভাবে করতে হয়?

পটল চাষ কিভাবে করতে হয়? এ বিষয়টি সম্পর্কে অনেকেই জানতে আগ্রহী। যেহেতু পটল অনেক পুষ্টিকর খাবার তাই পটল এর চাহিদা অনেক বেশি থাকে। সাধারণত তাই অনেক ব্যবসায়ী পটল চাষ কিভাবে করতে হয়? এই বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাই। আজকের এই আর্টিকেলে পটল চাষ কিভাবে করতে হয়? সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।

আপনি যদি পটল চাষ কিভাবে করতে হয়? না জেনে থাকেন তাহলে সম্পূর্ণ আর্টিকেল জুড়ে আমাদের সঙ্গে থাকুন। তাহলে চলুন দেরি না করে পটল চাষ কিভাবে করতে হয়? বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

পেজ সূচিপত্রঃ পটল চাষ কিভাবে করতে হয়?

পটল চাষ পদ্ধতি

পটল আমাদের কাছে খুবই পরিচিত একটি সবজি। সাধারণত শীতকালে বেশি পটল দেখা যায়। পটলের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদান সাধারণত তাই মানুষের কাছে পটলের চাহিদা এত বেশি। সবজি যারা চাষ করে থাকে সাধারণত তারা অনেকেই পটল চাষ কিভাবে করতে হয়? এ বিষয়গুলো সম্পর্কে সঠিক ধারণা রাখেনা।

আরো পড়ুনঃ লেবুর ৩০টি উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত

যেহেতু বাজারে পটলের চাহিদা বেশি থাকে তাই আপনি খুব সহজে পটল চাষ করে লাভবান হতে পারবেন। এক্ষেত্রে আপনাকে প্রথমে পটল চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জেনে নিতে হবে। পটল চাষের জন্য বেশি তাপমাত্রা ও সূর্যালোকের প্রয়োজন হয়। পটল চাষ করতে হলে বন্যা মুক্ত ও পানি জমে না এরকম বেলে দোআঁশ মাটি নির্বাচন করতে হবে।

জমি তৈরি ও চারা রোপনঃ পটল চাষ করতে হলে অবশ্যই বন্যা মুক্ত ও বন্যার পানি জমে না এরকম বেলে দোআঁশ মাটি নির্বাচন করতে হবে। এরপর মাটি ভালোভাবে চাষ দিয়ে প্রস্তুত করে নিতে হবে। জমি কে তিন থেকে চারটি আড়াআড়ি চাষ ও মই দিয়ে মাটির ঝুরঝুরা ও সমান করে নিতে হবে। আপনি যদি বেড পদ্ধতিতে পটল চাষ করেন তাহলে ভালো ফলাফল পাবেন।

চারা রোপণের সময়ঃ সাধারণত শীতকালে পটলের চাহিদা বেশি থাকে তাই অক্টোবর থেকে নভেম্বর অথবা ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ মাস পটলের চারা রোপণের উপযুক্ত সময় বলে বিবেচনা করা হয়। আপনি যদি পটল চাষ করার কথা চিন্তা ভাবনা করে থাকেন তাহলে অক্টোবর মাসের আগেই আপনাকে জমি তৈরি করা শুরু করে দিতে হবে।

মাটিতে যদি পর্যাপ্ত আদ্রতা না থাকে তাহলে শাখা কলম শুকিয়ে মারা যায় এক্ষেত্রে পলিব্যাগের শাখা কলম লাগানোর মাধ্যমে চারা গজিয়ে এই সমস্যার সমাধান খুব সহজেই করা যায়। পটল চাষের ক্ষেত্রে আপনাকে কয়েক দফায় শাখা কলম লাগাতে হবে। এই কাজটি করলে আপনি এই গাছ থেকে সারা বছর ফলন পাবেন বলে আশা করা যায়।

সার প্রয়োগ এবং মাত্রাঃ আপনি যদি পটলের সঠিক ফলাফল চান তাহলে আপনাকে অবশ্যই সার প্রয়োগ ও সারের মাত্রা সঠিক রাখতে হবে। মাদা প্রতি এক কেজি গোবর সার, ২৫০ গ্রাম খৈল, ১০০ গ্রাম ইউরিয়া, ১৭০ গ্রাম টিএসপি, ১৫০ গ্রাম জিপসাম সার রোপনের সময় প্রয়োগ করতে হবে। পটল গাছ সাধারণত প্রাকৃতিক উদ্ভিদ তাই এগুলো মাটির ওপর উৎপাদন করলে গায়ে সাদা সাদা ফ্যাকাশে বা হলুদ বর্ণের হয়ে যায়। সাধারণত এই বিষয়গুলো বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে।

পটল চাষ কিভাবে করতে হয়

পটল চাষ কিভাবে করতে হয়? সাধারণত এই বিষয়টি সম্পর্কে আমরা ইতিমধ্যেই বেশ কিছু পদ্ধতি সম্পর্কে জেনেছি। আপনি যদি সঠিকভাবে পটল চাষ করতে চান তাহলে আপনাকে অবশ্যই পটল চাষ কিভাবে করতে হয়? বিষয়টি সম্পর্কে জানতে হবে। আপনি কিভাবে জমি তৈরি ও চারা রোপন করবেন? এছাড়া চারা রোপনের সময় ও সার প্রয়োগ এবং মাত্রা সম্পর্কে আলোচনা করেছি।

পানি নিষ্কাশনঃ পটল গাছ জলবদ্ধতা একেবারে সহ্য করতে পারে না। তাই আপনাকে এই বিষয়টি সঠিকভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে। বৃষ্টি বা সেচের অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে। যদি কখনো পানি জলবদ্ধতা হয়ে যায় তাহলে অবশ্যই তা নালা দিয়ে বের করে দিতে হবে।

পটল গাছের পোকামাকড় দমনঃ পটলের গাছ ও ফল বিভিন্ন ধরনের পোকামাকড় দ্বারা আক্রান্ত হয়ে থাকে। তাই আপনি যদি পটলের চাষ ভালোমতো করতে চান এবং ফলন ভালো পেতে চান তাহলে অবশ্যই আপনাকে এ বিষয়টি সম্পর্কে সঠিক ধারণা রাখতে হবে। ফলের মাছি পোকা, কাটলে পোকা, উইপোকা, মিলিবাগ ও সাদা মাছি অন্যতম।

পটল ফলের মাছি পোকার সাধারণত কচি ফলের ভেতরে ছিদ্র করে ডিম পাড়ে। ডিম ফুটে ক্রিয়া বের হয় এরা ফলের নরম অংশ খেয়ে পূর্ণ বয়স্ক পোকা বের হয়ে আসে। তাই আপনি যদি এ ধরনের মাছি দেখেন তাহলে খুব তাড়াতাড়ি ব্যবস্থা নেবেন। এ সময় ফসলের ক্ষেত পরিষ্কার রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পোকা দমনে ফাদের ব্যবহার ব্যাপক জনপ্রিয়।

আক্রমণ যদি মারাত্মক হয় তাহলে ডিপটেক্স ৮০ এমপি প্রতি লিটার পানিতে এক মিলিয়ে হারে মিশিয়ে ১০ থেকে ১৫ দিন পর তিন থেকে চারবার স্প্রে করতে হবে। এমন ভাবে স্প্রে করতে হবে যেন প্রতিটি গাছ এর সুফল পেতে পারে।

পটল চাষের সঠিক পদ্ধতি

পটল আমাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং উপকারী সবজি। সাধারণত তাই অনেক নতুন ব্যবসায় রয়েছে যারা পটল চাষের সঠিক পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চাই। আমরা ইতিমধ্যেই পটল চাষ কিভাবে করতে হয়? বিষয়টি সম্পর্কে একটা ধারণা নিয়েছি। পটল চাষে বেশি তাপমাত্রা ও সূর্যালোকের প্রয়োজন হয়। বাংলাদেশের আবহাওয়া অনুযায়ী অক্টোবর থেকে নভেম্বর অথবা ফেব্রুয়ারী থেকে মার্চ মাস পটল চাষের জন্য উপযুক্ত।

আরো পড়ুনঃ খেজুরের ২০ টি উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত

জমি তৈরিঃ জমি তৈরি করার সময় অবশ্যই আপনাকে লক্ষ্য রাখতে হবে সেই জমিতে পানি নিষ্কাশনের সুবিধা আছে কিনা। সাধারণত যেই জমিতে পানি নিষ্কাশনের সুবিধা রয়েছে সেই জমি নির্বাচন করতে হবে। এক্ষেত্রে অবশ্যই উঁচু জমি অথবা বেলে দোআঁশ  অথবা দোআঁশ মাটি নির্বাচন করতে হবে। আপনি যদি পটল চাষ করার চিন্তা করে থাকেন তাহলে অক্টোবর মাসের আগে থেকেই জমি তৈরি করতে হবে।

বেড পদ্ধতিতে পটলের চাষাবাদের সাধারণত বেডের চওড়া ১ - ১.৫ মিটার হয়ে থাকে। বিয়ের থেকে বেডের মাঝে ৭৫ সেন্টিমিটার নালা রাখতে হবে। সাধারণত একটি মাদায় গাছের দূরত্ব যেন ৭ থেকে ১০ সেন্টিমিটার হয় এ বিষয়টি সম্পর্কে লক্ষ্য রাখতে হবে এবং গভীরতা ৫০ সেন্টিমিটার হতে হবে।

চারা তৈরি ও বপন পদ্ধতিঃ আমাদের দেশে সাধারণত অক্টোবর থেকে নভেম্বর অথবা ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত পটলের চারা রোপন করার উপযুক্ত সময়। পটল সাধারণত কান্ড এবং টিউবারের মাধ্যমে বংশবিস্তার করে। আপনি যদি শাখা কলম ব্যবহার করে থাকেন তাহলে অবশ্যই এক্ষেত্রে আপনাকে পরিপক্ক কান্ড ব্যবহার করতে হবে।

সার প্রয়োগঃ আমরা অনেকেই জানি যে পটল হলো দীর্ঘমেয়াদী সবজি ফসল। পটল গাছের বৃদ্ধি ও ভালো ফলন পেটে গোবর বা জৈব সার পরিমাপ মতো প্রয়োগ করতে হবে। ফসল সংগ্রহের পর প্রতি মাসে হেক্টর প্রতি ১৮ কেজি ইউরিয়া, ২৫ কেজি টিএসপি এবং ১৪ কেজি এমপি সার ওপরই ভাগে প্রয়োগ করতে হবে।

সেচ ও পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থাঃ পটলের গাছ জলাবদ্ধতা একেবারে সহ্য করতে পারে না। এছাড়া যদি ফসলের জমিতে পানি একেবারেই ঘাটতি হয়ে থাকে তাহলে পটলের ফলন ভালো হয় না। তাই আপনি যদি পটলের ফলন ভালো পেতে চান তাহলে অবশ্যই আপনাকে নিয়মিত সেচ দিতে হবে এবং বৃষ্টির সময় অবশ্যই পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা সঠিক রাখতে হবে।

মাছি পোকা আক্রমণঃ ফলের মাছি পোকা কচি পটলের ভেতরে ছিদ্র করে ডিম পাড়ে। পরবর্তীতে এই ডিম থেকে বাচ্চা হয়ে ফলের নরম অংশ খেয়ে পূর্ণবয়স্ক পোকা বের হয়ে আসে। মাসে পোকা আক্রমণ থেকে পটলকে রক্ষা করতে অবশ্যই ক্ষেত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।

লাল পোকা আক্রমণঃ পটল গাছে বিভিন্ন পোকা আক্রমণ করতে পারে তার মধ্যে লাল পোকা অন্যতম। আক্রান্ত পাতা শক্ত চামড়ার মত হয় এবং পাতা বিবর্ণ হয়ে ধীরে ধীরে শুকিয়ে যায়। লাল পোকা আকারে অত্যন্ত ছোট হয় এরা পাতার নিচে দিয়ে অবস্থান করে। তাই আপনাকে অতি সতর্কতার সাথে পোকা গুলো দমন করতে হবে। এজন্য অবশ্যই পটল ক্ষেত পরিষ্কার রাখতে হবে।

পটলের শিকড়ের গিট রোগঃ পটলের গাছের যে সকল রোগ হয় সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো শিকড়ের গিট রোগ। সাধারণত এটিকে মারাত্মক সমস্যা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এর কারণে ফলন কমে যেতে পারে। এ রোগের আক্রমণ গাছে ছোট বড় অনেক গিটের সৃষ্টি হতে পারে। ফলে এদের মূল নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

আধুনিক পদ্ধতিতে পটল চাষ

যেহেতু আমরা ইতিমধ্যেই পটল চাষ কিভাবে করতে হয়? বিষয়টি সম্পর্কে জেনেছি তাই আশা করি আপনারা আধুনিক পদ্ধতিতে পটল চাষ সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য জানতে পেরেছেন। পটল চাষে ভালো ফলন পেতে হলে আপনাকে অবশ্যই আধুনিক পদ্ধতিতে পটল চাষ করতে হবে। বর্তমান সময়ে ভালো ফলন পাওয়ার জন্য এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

পটল বাংলাদেশের সবজি গুলোর মধ্যে অন্যতম প্রধান। পটলের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান তাই মানুষ এর কাছে এত বেশি চাহিদার সবজি এটি। বাংলাদেশ গ্রীষ্মকালে হাজার হাজার হেক্টর জমিতে পটল চাষ করা হয়। সাধারণত পটলকে উষ্ণ আদ্র আবহাওয়া ফসল হিসেবে বিবেচনা করা হয়। পটলের জন্য উচ্চতর তাপমাত্রা এবং অধিক সূর্যালোক প্রয়োজন হয়।

আপনি পটল চাষ করলে অবশ্যই মাটির নির্বাচন করার সময় বন্যা মুক্ত এবং পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা যুক্ত জমি নির্বাচন করবেন। এছাড়া মাটির ধরন অবশ্যই দো-আঁশ এবং বেলে দো-আঁশ মাটি হতে হবে। সাধারণত এই জমিতে ভালো ফলন পাওয়া যায়। এছাড়া আপনি যখন বড় পরিসরে পটল চাষ করবেন তখন অবশ্যই বেশি গবেষণা ইনস্টিটিউট এর পরামর্শ নিয়ে নেবেন।

শেষ কথাঃ পটল চাষ কিভাবে করতে হয়?

প্রিয় পাঠকগণ আজকের এই আর্টিকেলে পটল চাষ পদ্ধতি, পটল চাষ কিভাবে করতে হয়? পটল চাষের সঠিক পদ্ধতি, আধুনিক পদ্ধতিতে পটল চাষ ওকে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি আপনারা উক্ত বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। আপনি যদি পটল চাষ করতে চান তাহলে অবশ্যই উক্ত বিষয়গুলো বিস্তারিত জেনে নেবেন।

আরো পড়ুনঃ পেয়ারা পাতার ২৫ টি উপকারিতা ও অপকারিতা

এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ এবং তথ্যমূলক আর্টিকেল আরো পড়তে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট ফলো করুন। কারণ আমাদের ওয়েবসাইটের নিয়মিত এ ধরনের আর্টিকেল প্রকাশ করা হয়।১৬৮৩০

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url